স্টাফ রিপোর্টার ::
সিলেটের বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের পরিচালনা কার্যক্রম সম্পর্কে রুল ইস্যু করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে যৌথ বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।রুলে হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালে সম্পাদিত ট্রাস্টের দলিলের মাধ্যমে বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের কার্যক্রম কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবেনা- এই মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের প্রতি নোটিশ জারি করেছেন।জানা গেছে, ২০১৫ সালে সম্পাদিত নিয়ম বহির্ভূত ও ভুল সংবিধান/গঠণতন্ত্র দিয়ে মনগড়াভাবে নির্ধারিত ৭ জন ট্রাস্টি বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে’র একটি দলিল সম্পাদন করে ট্রাস্টের নামে বিভিন্ন বেআইনী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রারী অফিসে ২০১৫ সালে সম্পাদিত ৪-৭২ নং উক্ত দলিলের মাধ্যমে কতিপয় ব্যক্তি ট্রাস্টের গঠণতন্ত্র লঙ্ঘণ করে নীতিমালা পরিপন্থী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। অথচ, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের গঠনতন্ত্রে ট্রাস্টের মূলধনের ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে প্রতি বছর ছাত্র/ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করার বিধান রয়েছে । তাই ট্রাস্টের মূলধন টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া গঠনতন্ত্রে সাধারণ সভায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন ছাড়া ট্রাস্টের মূলধন থেকে কোনো ফান্ড উত্তোলন করে খরচ করা যাবে না বলে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু,ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘণ করে ট্রাস্টের সদস্যদের অনুমোদন ব্যাতিত মীর্জা আসহাব বেগ সভাপতি,মোঃ নজরুল ইসলাম সাধারণ সম্পদক এবং মিসবাহ উদ্দিন কোষাধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে তাদের ইচ্ছামাফিক ট্রাস্টের মূলধন থেকে ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে খরচের রশিদ এবং ট্রাস্টের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসেবে মিলিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে; এই অর্থ কি খাতে ব্যয় হয়েছে জিজ্ঞেস করা হলে মীর্জা আসহাব বেগম স্বীকারোক্তিতে বলেন, ট্রাস্টের দলিল সম্পাদন ও সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রারকে ঘুষ প্রদান এই অর্থ খরচ করা হয়েছে। এ টাকার ব্যাপারে ট্রাস্টের তৎকালীন ট্রেজারার মিসবাহ উদ্দিনও কোন সদুত্তর প্রদান করতে পারেননি। এ ঘটনায় ট্রাস্টের বর্তমান কার্যকরী কমিটি তৎকালীন সভাপতি মীর্জা আসহাব বেগসহ সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে যুক্তরাজ্যের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আইনী নোটিশ প্রদান করেন।ট্রাস্টের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মতসির খান কার্যকরী কমিটির সিদ্বান্ত মোতাবেক এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের চ্যারিটি কমিশনেও লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু, এরপরও মীর্জা আসহাব বেগসহ তৎকালীন দায়িত্বশীলরা বেআইনিভাবে ট্রাস্টের ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে উত্তোলনকৃত টাকা ফেরত প্রদান এবং ২০১৫ সালে নীতি বহির্ভূত ও ভুল গঠনতন্ত্র দিয়ে সম্পদিত দলিল বাতিলের ব্যাপারে কার্যকরী কোনো উদ্যেগ গ্রহণ করেন নাই।ফলে, বাধ্য হয়ে কার্যকরী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (রিট পিটিশন নং- ৯৬৯১/২০১৯) দাখিল করেন। রিট পিটিশনে বিবাদী করা হয়- ১। বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ সচিব, ২। আইন সচিব, ৩। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ৪। নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, ৫। জেলা রেজিস্ট্রার, সিলেট, ৬। রেজিস্ট্রার, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, সিলেট সদর, দলিল সম্পাদনকারীদর মধ্যে ৭। মীর্জা আসহাব বেগ, ৮। মোঃ নজরুল ইসলাম, ৯। ফিরোজ খান পংকী, ১০। সাজ্জাদুর রহমান, ১১। আব্দুর রউফ, ১২। আব্দুল ওয়াহিদ ও ১৩। মোঃ রহমত আলীকে।উক্ত রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ হাইকোর্ট বেঞ্চ বিবাদীদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। বিচারপতিদ্বয় রুলের আদেশে বলেন, ২০১৫ সালে সম্পাদিত ট্রাস্টের দলিলের মাধ্যমে বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৭ নং থেকে ১৩ নং বিবাদীদের বিরুদ্বে ৩ নম্বর বিবাদী সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃকআইনি পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা কেন আইনের বরখেলাপ বলে গণ্য করা হবে না ?- এই মর্মে কারণ দর্শাতে হবে। এছাড়া ট্রাস্টের নামে দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে পরিচালিত কার্যক্রমের বৈধ আইনি ভিত্তি নেই এবং এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আদালত কেন যথাযথ ও উপযুক্ত আদেশ প্রদান করবে না, তার জন্য উপযুক্ত কারণ দর্শাতে হবে।রিট পিটিশন শুনানীতে অংশ নেন- আবেদনকারীর পক্ষে এডভোকেট মোঃ ফরহাদ বিন হোসাইনএবং সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নী জেনারেল মিস কাজী জিনাত হক, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোঃ সারওয়ার হোসাইন, এসিস্টেন্ট এটর্নী জেনারেল মাহফুজা বেগম এবং এসিস্টেন্ট এটর্নি জেনারেল আইরিন জাহান।